আম চাষে ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনে করণীয়

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কৃষি প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

download (4)স্বাদে, গন্ধে, রঙে, রসনা তৃপ্তিতে আম সত্যিই অতুলনীয়। তাই ফলের রাজা আম। সারা বিশ্বে ১৫০টির অধিক জাতের আম পাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় ভর্তা, আচার, জ্যাম, জেলি, আমচুর, আমসত্ত্ব, আমদুধ, আমের তৈরী জুসসহ নানাভাবে আম খেয়ে থাকি আমরা।

পুষ্টিগুণ বিবেচনায় খাদ্য উপযোগী ১০০ গ্রাম আমের মধ্যে রয়েছে-৮ হাজার ৩০০ মাইক্রোগ্রাম কেরোটিন, ৯০ কিলোক্যালরি শক্তি, ২০ গ্রাম শর্করা, ১৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৪১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’।

আম চাষের প্রধান শত্রু হল এর ক্ষতিকর পোকামাকড় ও রোগবালাই। চাষি ভাইয়েরা চলুন তাহলে জেনে নেই  আম চাষের জন্য কয়েকটি ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগবালাই  সম্পর্কে ।

আমের ক্ষতিকর পোকামাকড়:

আমের ক্ষতিকর পোকামাকড়ের মধ্যে রয়েছে- হপার পোকা, মাছি পোকা, গল এবং উইভিল।

১। হপার পোকা:

আম গাছে মুকুল আসার সময় এদের আক্রমণ দেখা যায় । পূর্ণবয়স্ক এবং বাচ্চা (নিম্ফ) অবস্থায় এ পোকা মুকুলের রস চুষে খায় এবং মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়ে।

দমন : আমের হপার দমনের জন্য বুস্টার ১০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি কিংবা স্টার্টার ৪০ ইসি ১০ লিটার পানির সাথে ২০ মিলি পরিমাণ তরল কীটনাশক ফুট পাম্পের সাহায্যে অন্তত দু’বার সম্পূর্ণ গাছে ছিটিয়ে দিতে হবে।

২। মাছি পোকা :

আমের মুকুল ফোটার ১৫-২০ দিন পর মার্বেল আকার ধারণ করার সময় থেকেই মাছি আসা শুরম্ন করে। এরপর এক মাস বয়সে আমের গায়ে মাছি বসা শুরু করে। আরো ১০-১২ দিন পর আমের নিচে ছিদ্র করে মাছি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর আঠালো পদার্থ নিঃসরণের মাধ্যমে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং আমের ভেতরে কীড়া বড় হতে থাকে। এক সময় আম ফেটে পচে যায়। এ অবস্থায় কোনো কীটনাশক ব্যবহার করে লাভ নেই।

দমন : মুকুল ফোটার ১৫-২০ দিনে প্রথম বার আক্রমণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে মর্টার ৪৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি ভালোভাবে মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে। এভাবে প্রথমবার সেপ্র করার এক মাস পর দ্বিতীয় বার এবং আরো ১৫ দিন পর তৃতীয় বার একই মাত্রায় মর্টার ৪৮ ইসি সেপ্র করতে হবে।

৩। ডগার গল সৃষ্টিকারী সাইলিড:

এ পোকার আক্রমণে আম গাছে নতুন পাতা ও ফুলের কুঁড়ি বদলে সবুজ রঙের শক্ত এবং সূঁচালো মুখ গলের সৃষ্টি হয়। এসব গল থেকে কোনো পাতা বা ফুল বের হয় না।

দমন : ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে যখন আক্রানত্ম গাছের পাতায় পোকার ডিম পাড়ার গর্ত থেকে মোমের গুঁড়োর মতো মল বের হতে দেখা যায় তখন থেকে শুরম্ন করে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্টার্টার ৪০ ইসি প্রতি ২ লিটার পানিতে ৫ মিলি কীটনাশক মিশিয়ে গাছে সেপ্র করে ভিজিয়ে দিতে হবে।

৪। উইভিল বা ভোমরা পোকা:

উইভিল বা ভোমরার স্ত্রী পোকা কাঁচা আমের গায়ে ডিম পাড়ে। আমের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয় এবং ফলের শাঁস খায়। ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে  ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এরফলে বাইরে থেকে আমটি ভালো দেখালেও ভেতরে কীড়া পাওয়া যায়।

দমন : প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে মরা ও অপ্রয়োজনীয় শাখা ছেঁটে ফেলা এবং পোকাক্রানত্ম ফল মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। এ ছাড়া আমের আঁটি শক্ত হওয়ার সময় মর্টার ৪৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি কীটনাশক গাছে সেপ্র করে ভিজিয়ে দিতে হবে।

আমের রোগবালাই

imagesআমের ক্ষতিকর রোগবালাইয়ের মধ্যে ফোস্কা বা অ্যানথ্রাকনোজ, শুঁটিমোল্ড বা মহালাগা এবং পাউডারি মিলডিউ অন্যতম।

১। ফোস্কা বা অ্যানথ্রাকনোজ:

ফোস্কা বা অ্যানথাকনোজ রোগের আক্রমণে গাছের পাতা, কাণ্ড, মুকুল ও ফলে ধূসর বাদামি রঙের দাগ পড়ে। মুকুলগুলো ঝরে যায়। এ ছাড়া আমের গায়ে কালো দাগ পড়ে, আম পচে যায়। কুয়াশাচ্ছন্ন ও ভেজা আবহাওয়ায় এ রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিকার : এ রোগ দমনের জন্য আক্রানত্ম পাতা, ডাল, পুষ্প মঞ্জরি সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আম বাগান সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, গাছের নিচের মরা পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে, গাছে মুকুল আসার পর ফুল ফোটার আগে বেনডাজিম ৫০ ডবিস্নউপি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে। এ ছাড়া এন্টিসিকা ২৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি ব্যবহার করা যেতে পারে। আমের আকার মটর দানার মতো হলে দ্বিতীয় বার বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।

২। শুঁটি মোল্ড বা মহালাগা:

এ রোগের আক্রমণে আম পাতা ও ফলের ওপর কালো আবরণ পড়ে। আম গাছে মিলিবাগ অথবা হপার পোকায় আক্রমণ করলে এরা হানিডিউ বা মধু নিঃসরণ করে, ফলে হানিডিউতে শুঁটি মোল্ড সৃষ্টিকারী ছত্রাক জন্মায় এবং পাতা, মুকুল এবং ফলে তা বিসত্মার লাভ করে।

প্রতিকার : এ রোগে আক্রানত্ম গাছে বেনডাজিম ৫০ ডবিস্নউপি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে। গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে সাথে সাথে তা দমন করতে হবে।

৩। পাউডারি মিলডিউ:

এ রোগের আক্রমণে আমের মুকুলে সাদা  পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়। এ রোগের ফলে মুকুল ঝরে যায়। আক্রানত্ম  আমের চামড়া খসখসে হয় এবং কুঁচকে যায়।

প্রতিকার : গাছের মুকুল আসার পর একবার এবং ফল মটর দানা আকারের হলে আরো একবার বেনডাজিম ৫০ ডবিস্নউপি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম এবং হেমেঙিল ৭২ এম জেড ডবিস্নউপি ১০ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।

আমের গুণগত মান ও ফলন বৃদ্ধিতে করণীয়

* আমের মুকুল আসার আগে এবং আম মটর দানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম লিবরেল জিঙ্ক ও ২০ গ্রাম লিবরেল বোরণ সার উত্তমরূপে মিশ্রিত করে সেপ্র করতে হবে। এ দুটি সার আমসহ অন্যান্য ফলের গুণগতমান ও ফলন বৃদ্ধির  জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

* আমের মুকুল আসার সময় মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়লে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি বুস্টার ১০ ইসি এবং বেনডাজিম ৫০ ডবিস্নউপি প্রতি ১০  লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।

* আমের মুকুল ফোটার ১৫-২০ দিন পর মটর দানার সময় মাছি পোকার আক্রমণ হলে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি, মর্টার ৪৮ ইসি সেপ্র করতে হবে।

আম চাষের ক্ষেত্রে এ সকল পোকার আক্রমনে বাড়তি সতর্কতা দরকার। সময় মত ব্যবস্থা গ্রহন করলে আমের ভাল ফলন পাওয়ার পাশাপাশি লাভবান হতে পারবেন। আর আম চাষের ক্ষত্রে যে কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে নিকটস্থ কৃষি অফিসের কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে ভূল করবেন না।

প্রতিক্ষণ/এডি/আজমল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G